ধান মিলিং

এসএসসি(ভোকেশনাল) - এগ্রোবেসড্ ফুড -১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK
1

ধান থেকে তুষ ও কুঁড়া সরিয়ে ফেলার প্রক্রিয়াকেই মিলিং বা ধান ভাঙানো বলে। ধান মিলিং দুই ভাবে করা যায়। যথা- (ক) প্রচলিত মিলিং (খ) আধুনিক মিলিং

প্রচলিত সিলিং : প্রচলিত মিলিং বা ধান ভাঙানোতে যে সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয় তা হল (১) গাইল ও সিয়া (২) ঢেঁকি।

আধুনিক মিলিং-এর যন্ত্রপাতিগুলো নিম্নরূপ-

(১) তুষ ছাড়ানো মেশিন (Husker) 

(২) মিলিং মেশিন : এটি ভূম ছাড়ানো, কুঁড়া ছাড়ানো ও চাল চকচকেকরণ একত্রে সম্পন্ন করে। 

(৩) রাইস মিলিং প্লান্ট : এ প্লান্টে ধান ঝাড়াইকরণ, সিদ্ধকরণ, শুকানো, তুষ ছাড়ানো, কুঁড়া ছাড়ানো, চাল থেকে খুদ ও কুঁড়া পৃথকীকরণ, আকার অনুযায়ী বাছাইকরণ ইত্যাদি সুবিধা সম্বলিত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ধান একসাথে প্রক্রিয়াজাত করা যায়।

তুষ ছাড়ানো মেশিন : এটি দুই ধরনের যথা (ক) মন পদ্ধতি যেমন- ধানকল বা হলার (খ) রোলার পদ্ধতি যেমন- রাবার রোলার হাঙ্কার

রাইস হুলার বা ধান কল : আমাদের দেশে বর্তমানে বহুল প্রচলিত ছোট ছোট ধানকলগুলোতে ঘর্ষণ বা ফ্রিকশান পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ধান ভাঙানো হয়। এতে ভূষ খসানোর সাথে সাথে কুঁড়া ছাড়ানো ও সামান্য পোলিশিং-এর কাজ একই সাথে সম্পন্ন হয়। এসব রাইস হলারগুলো আমাদের দেশে ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় ভাষায় এদেরকে ধান কল বলে। এগুলোর দাম কম, স্থাপনে জায়গা কম লাগে, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খুব সহজ এবং দেশেই তৈরি করা যায়। এগুলোর অসুবিধা হলো ভাঙা চাল ও খুদের পরিমাণ বেশি হয়। তাছাড়া চালের সাথে তুষ, কুঁড়া, খুদ ও ভাঙ্গা চাল একত্রে মিশে যায়।

হাঙ্কার : এই যন্ত্রে একই ব্যাসের দুইটি রাবার রোলার পাশাপাশি সেট করা হয়। রোলার দুইটির একটি বেশি গতিতে অন্যটি ধীর গতিতে ঘুরে। হলার থেকে ধান নিয়ন্ত্রিতভাবে রোলার দুইটির মাঝে পড়ে। মেশিন চালু করলে রোলার দুইটি তিগতি এবং বিপরীত গতিতে ঘুরতে থাকে। ফলে ধানের খোসা বিভক্ত হয়ে চাল বেরিয়ে আসে। এভাবে ধান মিলিং করার সুবিধা হলো এতে খুদের পরিমাণ কম হয় এবং চালের ভ্রূণ বা এপিডার্মিস অক্ষত থাকে। এপিডার্মিসের আবরণ গুদামজাত অবস্থার চালকে নষ্ট হতে দেয় না। এ প্রকার হাক্ষারের দাম বেশি, গঠন জটিল এবং বর্তমানে আমাদের দেশের তৈরি হয় না।

কুঁড়া ছাড়ানো যন্ত্র : ধানের খোসা ছাড়ানোর পর যে চাল পাওয়া যায় তার উপর লালচে বর্ণের কুঁড়ার আবরণ থাকে। এটি পরিপাক ক্রিয়ায় অসুবিধা সৃষ্টি করে। এজন্য চালকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য কুঁড়া ছাড়ানো যন্ত্রের সাহায্যে তা তুলে ফেলতে হয়। এ যন্ত্রটিতে দুইটি প্রধান অংশ থাকে তা হলো ছিদ্রযুক্ত ধাতব সিলিন্ডার অ্যাবাসিত রোলার। এর মাঝে থাকে ফাঁকা স্থান। এই ফাকা স্থানেই ঘৰ্ষণ পদ্ধতিতে মোটর দ্বারা রোলার ঘুরানোর ফলে চালের কুঁড়া আপসারিত হয়ে নিয়ে গঠিত হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট (ব্রি) পাওয়ার উইনোয়ার (শক্তি চালিত কুঁড়া ছাড়ানো যন্ত্র) উদ্ভাবন করেছে যা ০.৫ অন্বশক্তিসম্পন্ন। স্থানীয়ভাবে এটি তৈরি করা যায়। এটি দুই জন শ্রমিক চালিয়ে প্রতি কর্মদিনে ৮০০-১০০০ কেজি চাল পরিষ্কার করতে পারে।

মিলিং মেশিন : ধান থেকে খাদ্য উপযোগী চাল পেতে হলে ধানের খোসা ছাড়ানো, কুঁড়া ছাড়ানো, ঝাড়াই করা, সাদা করা, তুষ ও কুঁড়া আলাদা করা, ভাগ্নে চাল ও ফুল আলাদা করা ইত্যাদি প্ররিালো সম্পন্ন করতে হয়। এ সকল প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করার জন্য হাস্কার, হোয়াইটেনিং মেশিন ও পলিশিং মেশিন ইত্যাদি একত্রে সমন্বিত করে কম জায়গায় ও কম শ্রমিকের যারা সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাকে মিশিং প্রক্রিয়া এবং ব্যবহৃত যন্ত্রাবলিকে একত্রে মিলিং মেশিন বলে। উন্নত দেশের বেশির ভাগ খামারে মিলিং মেশিন দ্বারা। ধান প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ করা হয়। মিলিং মেশিনের বিভিন্ন অংশের নাম নিম্নে দেওয়া হলো-

(১) ধান পরিষ্কারক

(২) ধানের খোসা ছাড়ানো যন্ত্র

(৩) ধান আলাদাকারক

(৪) এলিভেটর

(৫) কুঁড়া ছাড়ানো যন্ত্র

(৬) কুঁড়া টানার ফ্যান

(৭) সাইক্লোন

(৮) চালনী

(৯) গ্রেডার ইত্যাদি।

Content added By
Promotion